গণতন্ত্রে বিরোধীদের ভূমিকা এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

বুধবার, আগস্ট ২৪, ২০১৬ 0 Comments A+ a-

একদিকে দেশজুড়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সমস্ত অ-কংগ্রেসী ও বাম বিরোধী শক্তিদের ঐক্যবদ্ধ করে সিপিএমের স্বপ্নের তৃতীয় ফ্রন্ট গড়ে তোলার তাগিদ আর অন্যদিকে ঘরের মাঠে বিরোধীদের দলের লোকেদের ভয় দেখিয়ে আর লোভের ফাঁদে ফেলে একের পর এক জেলা পরিষদ ও পুরসভা দখল করার তাগিদ, মোদ্দা কথা হলো নিজের ঘর কে বিরোধী শূন্য করে বিরোধীদের দাম না দেওয়ার অভিযোগ করে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে তীর ছোড়া হলো আজ মমতা বন্দোপাধ্যায়ের প্রধান রাজনৈতিক চাল। দেশজুড়ে মোদী বিরোধী গণ বিক্ষোভের সুযোগ নিয়ে তলে তলে পুরানো দোস্ত বিজেপির সাথে সেটিং বজায় রেখেও বিরোধিতার পারা চড়িয়ে দেশের অন্যান্য বিরোধীদের মধ্যমণি হয়ে এবার প্রধানমন্ত্রীর কুর্সির দিকে যখন মমতা বন্দোপাধ্যায় নজর দিচ্ছেন, রাজ্যের প্রতি বঞ্চনা, বিরোধীদের প্রতি অবজ্ঞা, ইত্যাদী অভিযোগের তীর যখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর দিকে ছুড়ছেন, ঠিক সেই সময়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি বিরোধী দল দ্বারা পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে পৌরসভা আজ তৃণমূল কংগ্রেসের দ্বারা পরিচালিত রাজ্য সরকার কে সেই একই অপরাধের অভিযুক্ত হিসেবে গণ্য করছেন, অভিযোগ করছেন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার এবং ছলে-বলে-কৌশলে বিরোধী শিবিরে ভাঙ্গন ধরানোর প্রয়াস করার।

গণতন্ত্রে বিরোধীদের ভূমিকা এবং মমতা বন্দোপাধ্যায়


মমতা বন্দোপাধ্যায় সহ সমগ্র দক্ষিণপন্থী ও অতি দক্ষিণপন্থীরা চিরকাল কমিউনিস্ট ও বামপন্থীদের গণতন্ত্র বিরোধী বলে গালাগাল করে থাকলেও তাঁরা নিজেরা সরকারে থাকলে বিরোধীদের কি চোখে দেখেন সে কথা আজ সবারই মোটামুটি জানা হয়ে গেছে। সিপিএমের সামাজিক-ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে মমতার অভিযোগ ছিল যে জ্যোতি বোস - বুদ্ধদেবরা কোনদিন বিরোধীদের মতামতকে গ্রাহ্য না করে দম্ভ নিয়ে বিরোধীদের কোনঠাসা করে নিজেদের রাজত্বকে মজবুত করার চেষ্টা করতো। মূলত সিপিএমের ৩৪ বছরের শাসনকালে পশ্চিমবঙ্গ বিরোধী শূন্য ছিল শেষ দুই - তিন বছর বাদ দিলে। তার আগে সিদ্ধার্থ রায়ের আমলেও পশ্চিমবঙ্গ বিরোধী শূন্য ছিল কারণ বিরোধীরা জেলে বা বধ্যভূমিতে ছিলেন, রক্তে ভেসে ছিল গণতন্ত্রের পথ। আজ মমতার আমলেও সেই পুরানো মদ কে নতুন বোতলে করে চোলাই করে চালান দেওয়া হচ্ছে। সৌজন্যে জোতদার পুত্র শুভেন্দু অধিকারী, ডিল সেটিং এর মাস্টার মুকুল রায় আর তৃণমূলের অন্যান্য সকল মেজ ও সেজ নেতারা। গণতন্ত্র আজ বিরোধী শূন্য রাখলেই কামাই বেশি হয়, মমতার দল আর দলের ভাই বোনেদের হাত খরচা ভালো হয়, আর এই কামাই বাড়াবার একমাত্র রাস্তা হলো সকল বিরোধী দলের জনপ্রতিনিধিদের প্রাণ আর মালের ভয় দেখিয়ে নিজের দিকে টেনে আনা। তাই কাল অবধি জলপাইগুড়ির যে সকল তথা কথিত বামেরা নীতি আর আদর্শের কথা বলে মমতার পিতৃ শ্রাদ্ধ করছিলেন তাঁরা আজ সকলে মুকুল - শুভেন্দুর সাথে হাতে হাত মিলিয়ে তৃণমূলের ঝান্ডা নাড়াচ্ছেন। ঠিক যেমন গতকাল অবধি যে লোকটা সিপিএমের ভিতরে বিপ্লবী-বিদ্রোহী বুলি ছুটিয়ে বিমান-বুদ্ধদের নীতি কথার শুলে বিদ্ধ করতো, সেই লোকটাই নীতি কথা কে শৌচালয়ে ফ্লাশ করে তৃণমূলের টিকিটে ভোটে জিতে মমতার গুণ কীর্তন করছে। এদের দলে নিয়ে নিজেকে সততা আর পরিছন্নতার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা মমতা বন্দোপাধ্যায় কি নীতির পরিচয় দিচ্ছেন তা আজ পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জানা হয়ে গেছে।

গণতন্ত্রের গান গাওয়া সরকারী আর আধা সরকারী বাম ও প্রাক্তন নকশালদের আজ প্রচন্ড ব্যথা লেগেছে মমতার এহেন আচরণে। অথচ সেই বাম আমলেও এই খেলাই যে চোরাগোপ্তা ভাবে চলতো সে কথা এখনো এই রাজ্যের মানুষের স্মৃতি থেকে মুছে যায়নি। হয়তো অনেক রাখ ঢাক করে বাম আমলে দুর্নীতি আর বিরোধীদের সপক্ষে টেনে এনে পঞ্চায়েত থেকে পৌরসভা অবধি কমিশন কামাবার প্রক্রিয়াটা চলতো, যা আজ মমতার আমলে চোখের সামনে একেবারে দিনের আলোয় চলছে, তবুও ঘটনা হচ্ছে যে এই রাজ্যে আজ যারা অভিযোগ করছেন গণতন্ত্র হরণের তাঁরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো কালে কোনো না কোনো ভাবে বিরোধীদের সাথে ঠিক এই ভাবেই ব্যবহার করেছেন। আর তাই হয়তো মমতার ভয়ে আর ক্ষমতার লোভে যখন বিরোধী শিবিরে ভাঙ্গন ধরছে তখন রাজ্যের মানুষ অবাক হচ্ছেন না। সমগ্র বিরোধীদের চেয়ে মাত্র কয়েক লক্ষ বেশি ভোটে জিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে মমতার দম্ভ বুদ্ধের চেয়ে কম বাড়েনি এ কথা আজ দিনের আলোর মতন স্পষ্ট। তৃণমূল নেত্রী জানেন যে দল কে ২০২১ সালের নির্বাচনী বৈতরণী ও তার আগে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন ও ২০২০ সালের পুর নির্বাচনে জিততে হলে এখন থেকেই সন্ত্রাস কে লাগামহীন ঘোড়ার মতন ছোটাতে হবে। জনসমক্ষে ভাবমূর্তি ধরে রাখতে দুই একটি প্রমোটার আর কাউন্সিলার কে না হয় কিছুদিন জেলে রেখে পরে জামিনে বের করে আনা যাবে, কিন্তু প্রমোটারীর আর ঠিকাদারির দালালির টাকার উপর থেকে রাজ্যের কোনো অঞ্চলে নিজের একচেটিয়া অধিকার মমতা বন্দোপাধ্যায় শিথিল করতে পারেন না। তিনি এবার বেগ দিচ্ছেন কেন্দ্রে ক্ষমতার চাঁদ ধরার জন্যে, অনেকটা ২০০৯ সালের পুনরাবৃত্তি করার আশায় আর কেন্দ্রে প্রতিযোগিতা করতে চাই কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা যা এই গরিব রাজ্যে প্রমোটারী আর সিন্ডিকেট রাজ বাদ দিয়ে অন্য কোথাও পাওয়া দুস্কর। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে তৃণমূল নৈব নৈব চ করে টিকে আছে, আর তাই সারা দেশের মধ্যমণি হয়ে ২০১৯ সালে ময়দানে নামার তাগিদটা বেশি বলে রাজ্যের মানুষকে দেখতে হবে নির্লজ্জ তৃণমূল নেতাদের টাকা খাওয়া আর শুনতে হবে নেত্রীর শুদ্ধিকরণের প্রতিশ্রুতি।

বিরোধী শূন্য গণতন্ত্র নাকি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রে নাকি শাসকের চেয়ে বিরোধীদের মূল্য বেশি, গণতন্ত্র মানে নাকি বিরোধীদের কথাও শোনা এবং সবাই কে সাথে নিয়ে চলা। আশা করি এই সমস্ত প্রবচন পাঠকেরা এর আগেও আনন্দ বাজার মার্কা বাজারী সংবাদ মাধ্যমের পাতায় বারবার পড়েছেন, কিন্তু বাস্তব জীবনে এর সাথে কোনো মিল খুঁজে পাননি। মাঝে মাঝে আমাদের কর্পোরেট মিডিয়া গোষ্ঠীগুলি বিলেতের উদাহরণ টেনে এনে আমাদের যদিও বলে যে গণতন্ত্রে বিরোধীদেরও বিশাল ভূমিকা আছে, তবুও বাস্তবে ঘটনা হলো যে ভোটে জিতে যে ক্ষমতায় আসে সে কোনদিন বিরোধীদের কথা শুনে কাজ করতে আসে না, সে আসে পাঁচ বছরে আখের গুছিয়ে নিয়ে পরবর্তী পাঁচ বছরে ক্ষমতায় থাকার পথ সুগম করতে।কেউ কেউ তৃণমূলের মতন তাড়াতাড়ি চেটেপুটে থালা পরিস্কার করার ঠেলায় পড়ে সারদা - নারদা প্রভৃতি কান্ডে জড়িয়ে পড়ে আর কেউ কেউ সরকারী বামেদের মতন ৩৪ বছর ঠাকুরঘরে লুকিয়ে লুকিয়ে কলা খেয়ে শেষে ধরা পড়ে যায়। এই তথাকথিত গণতান্ত্রিক সেট আপে রাজনীতি করতে আসার মূল উদ্দেশ্য হলো টু পাইস ইনকাম করা। শুনেছি মুম্বাই আর দিল্লিতে নাকি বিলেতের কায়দায় রাজনৈতিক পার্টিতে রীতিমত বেতন নিয়ে চাকুরী করা যায়। সিপিএম আবার এই ব্যবস্থাটি কে একটু বিপ্লবী বাম আতর চড়িয়েছিল এক কালে হোল টাইমারদের বেতন দিয়ে পুষে রেখে। তাই এই দেশে, বা এই ব্যবস্থায় যারাই রাজনীতিতে আসে তাঁদের উদ্দেশ্য হয় কিছু পয়সা কামিয়ে নেওয়া, আর পয়সা কামানো যাবে একমাত্র বড় বড় ব্যবসায়ী আর কর্পোরেট সংস্থাগুলোর থেকে, গ্রামের জোতদার আর আড়তদার-মজুতদার-কালোবাজারীদের থেকে, পাড়ার প্রমোটার আর বৈশ্যালয়ের মক্ষীর থেকে, আর এরা তখনই টাকা দেবে যখন এদের ব্যবসার ভালো মন্দ এই রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে, বা সোজা কথায় যখন সেই রাজনৈতিক ব্যক্তি ও দলের সরকারী ক্ষমতা থাকবে বা অন্তত পক্ষে ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসার প্রবল সম্ভাবনা থাকবে, যেমন ধরুন এই ২০১১ সালে মমতার পিছনে কি বিপুল ভাবে বড় বড় কর্পোরেট সংস্থাগুলো, প্রমোটাররা, জমি আর নারীর দালালরা, জোতদাররা টাকা ঢেলেছিল, অথবা এই ২০১৪ সালের নির্বাচনে কি বিপুল পরিমানের অর্থ বড় বড় বহুজাতিক ও দেশী মুৎসুদ্দি কর্পোরেট সংস্থাগুলো মোদীর পিছনে ঢেলেছিল। এই টাকা দেওয়া হয় শান্তিতে ব্যবসার নামে লুটপাট চালাবার জন্যে, আইনের খোঁচা থেকে বাঁচতে, আর যে কোনো সমস্যায় সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সমর্থন পেতে। আর জমি, নারী, খনিজ পদার্থ থেকে বাড়ি, গাড়ি, ঠান্ডা পানীয় নিয়ে ব্যবসা করে কামিয়ে খাওয়া লোকেদের জন্যে কোন রাজনৈতিক পার্টি ভোটে জিতলো তার চেয়ে বেশি জরুরী হলো যে কার রাজত্বে বেশি আমদানির সুযোগ আছে। ঠিক তেমনি  ভাবেই সমস্ত নির্বাচনী (সরকারী ও আধা সরকারী বাম সহ) পার্টির কাছে এবং এই দলের নেতাদের কাছে ভোটে জেতার তাগিদ হলো বেশি আমদানির তাগিদ বা কোথাও কোথাও বর্তমান আয় কে বজায় রাখার একমাত্র পথ। আচ্ছা ধরুন ক্ষমতাহীন এসইউসি বা সরকারী নকশালপন্থী দলগুলোকে স্বেচ্ছায় বড় বড় ব্যবসায়ী আর দালালেরা টাকা দেবে কেন যদি না এদের কোনো সংসদীয় ক্ষমতা না থাকে? কিন্তু সরকারী ভাবে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় না থেকেও রাজ্যে শক্তির হিসেবে আর কিছু টিম টিম করে জ্বলতে থাকা পুরসভায় ক্ষমতায় থাকার দরুন কংগ্রেস আর সিপিএম তবুও অনেক টাকা আয় করতে পারে। আর সেই টাকার উত্সের মূল জায়গা হলো এদের দখলে থাকা জেলা পরিষদ বা পুরসভাগুলো, যেখানে ঠিকা পাওয়ার জন্যে কমিশন চলে আর কমিশনের বা দালালির বখরা সেই দরজায় দাড়ানো আর্দালি থেকে রাজ্য নেতৃত্ব অবধি পৌঁছয়। তৃণমূলের টাকার ক্ষিদে এতই বেশি যে পশ্চিমবঙ্গে শিবরাত্রির সলতের মতন জ্বলতে থাকা সমস্ত বিরোধীদের আস্তানায় এবার ওরা হাত মেরেছে আর টেনে নিচ্ছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোটে লড়ে জেতা জনপ্রতিনিধিদের। আর এখানেই কাটা ঘায়ে একেবারে নুন ঘষা হয়ে গেছে বিরোধীদের জন্যে। প্রবল জোরে তাঁরা চিৎকার শুরু করেছে “গণতন্ত্র বিপন্ন” বলে।

আমাদের সামনে যে বস্তুটাকে সাজিয়ে গুছিয়ে রং করে “গণতন্ত্র” হিসেবে পরিবেশন করা হয় তার স্বরূপ বা শাঁসটা কিন্তু খোলের চেয়ে একেবারে আলাদা।এই গণতন্ত্র নামক বস্তুটা আসলে বড় লোকেদের, টাকাওয়ালা কুমিরদের স্বার্থে তৈরি একটা গরিব মারার মেশিন যার মধ্যে যে কোনো সাধু ব্যক্তিই নিজের সততা রক্ষা করতে পারবে না। বিদেশী একচেটিয়া ও লগ্নি পুঁজি এবং তার ভারতীয় মুৎসুদ্দি কর্পোরেট দালালেরা প্রথমেই ঠিক করে নেয় যে কাদের দিয়ে ওদের ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য পূরণ হবে এবং সেই রাজনৈতিক শক্তি কে, এমনকি তারা যদি চরম বিপ্লবী সেজে থাকা বামপন্থী হয় তবুও তাদের নির্বাচন জেতাতে বিভিন্ন কর্পোরেট শিবির খেলায় নামে। প্রত্যেকটি সংসদীয় রাজনৈতিক দল কোনো না কোনো বৃহৎ বহুজাতিক কর্পোরেট সংস্থার দালাল এবং এই দলগুলির মধ্যে যে নির্বাচনী প্রতিযোগিতা হয় তা আসলে বিভিন্ন বড় বড় কর্পোরেট সংস্থার নিজেদের ব্যাবসায়িক প্রতিপত্তি, বিভিন্ন বিদেশী শক্তির নিজের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিপত্তি বাড়ানোর প্রতিযোগিতা বাদে আর কিছুই নয়। কারণ বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে আসল প্রতিযোগিতা হলো গুটিকয়েক বৃহৎ কর্পোরেট সংস্থার দ্বারা এশিয়া-আফ্রিকা-দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বাজার দখল করে, প্রাকৃতিক সম্পদ, ও শ্রম লুট করে চরম মুনাফা আয় করার প্রতিযোগীতা। আর এর ফলেই সৃষ্ট হয় শাসকশ্রেণীর স্বার্থ রক্ষাকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পরস্পরের সাথে ক্ষমতা নিয়ে মারামারি। যদিও এদের নীতি আর আদর্শ মোটের উপর একই রকমের, তবুও এরা লড়াই করে নিজেদের বিদেশী মালিক ও তাদের দেশী দালালদের স্বার্থে। কংগ্রেস আর বিজেপি তো বটেই তৃণমূল আর সিপিএমের মতন দলগুলোও কোনো না কোনো বৃহৎ কর্পোরেট শক্তির স্বার্থ রক্ষা করে আর তাই এদের ক্ষমতা দখলের লড়াই ঝুটো গণতন্ত্রের দেউড়ি পার হয়ে রক্তাক্ত লড়াইয়ে পরিণত হয়। আর এই লড়াইতে চাপে পড়ে বা বেশি খাওয়ার লোভে শিবির পরিবর্তন করা কোনো বড় কথা নয়। আর গণতন্ত্রে বিরোধীদের অধিকার নিয়ে যেসব টেক্সট বুক গণতন্ত্রী আর তথাকথিত সমাজবাদী বামেরা গলা ফাটায় তারা আসলে লুটের মাল সরকারপক্ষ কে বিরোধী পক্ষের সাথে ভাগ করে খাওয়ার পক্ষে ওকালতি করে। কারণ শেষ বিচারে এদের রাজনীতি করার উদ্দেশ্য হলো অর্থ আয় করা, অনেক অনেক অর্থ আয় করা, চক্ষু লজ্জার মাথা খেয়ে অনুজ পাণ্ডের মতন, উত্তর প্রদেশ সহ অন্যান্য উত্তর ভারতীয় রাজ্যের রাজনীতিবিদদের মতন, রাজার হলে জীবন যাপন করা গরিব প্রজার মাঝে। এত খাঁটি সামন্তবাদী চেতনার মানুষ এই সোনার দেশের বাইরে কোথায় আর পাওয়া যাবে?

গণতন্ত্র চিরকাল শাসক শ্রেণীর, অর্থাৎ যে সামাজিক-আর্থিক শ্রেণী একটি দেশে বা সমাজে সবচেয়ে শক্তিশালী শ্রেণী হিসেবে বিরাজ করে, সেই শ্রেণীর স্বার্থে চলে। এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রচন্ড ভক্তি সহকারে শাসক শ্রেণী, অর্থাৎ জোতদার, জমিদার, দালাল পুঁজিপতি, বৃহৎ কর্পোরেট সংস্থাগুলোর স্বার্থে খাটে আর লাভের গুড় শাসক শ্রেণী কে চাটায়। এই ব্যবস্থার ভিতরে গিয়ে গরিব মানুষ, শোষিত জনজাতির মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ কোনোদিনই মুক্তি পাবেন না তাঁদের উপর চলতে থাকা নির্মম শোষণ ও অত্যাচার থেকে। শোষিত মানুষের মুক্তির সব চেয়ে বড় শত্রু তো এই জগদ্দল পাথরের মতন চেপে বসে থাকা পঁচা গলা ব্যবস্থাটাই। তাই এই ব্যবস্থাটাকে, শোষণের উপর টিকে থাকা ব্যবস্থাটাকে উৎখাত করেই গরিব মানুষ মুক্তি অর্জন করতে পারেন শোষণ ও অত্যাচার থেকে আর সেই উৎখাত করার স্বার্থে আজ গরিব মানুষকে ব্যাপক সংগ্রাম করতে হবে সকল ধরনের শাসক শ্রেণীর দালালদের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া মুক্তির আর কোনো পথ নেই, কোনোদিন ছিলও না।    

এই ব্লগের সত্বাধিকার সম্বন্ধে