মালদার কালিয়াচকের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প ছড়াচ্ছে সংঘ পরিবার

শুক্রবার, জানুয়ারী ০৮, ২০১৬ 0 Comments A+ a-

মালদার কালিয়াচক অঞ্চলে মুসলমানরা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা করেছে এবং হিন্দুদের ঘর বাড়ি ভেঙ্গেছে, মন্দির ভেঙ্গেছে, ইত্যাদি বলে সারা দেশে আরএসএস এর প্রচার মাধ্যম ৩রা জানুয়ারী থেকে বিরামহীন প্রচার করতে থাকে। প্রথমত সংবাদ মাধ্যমের খবরের উপর ভিত্তি করে ফেসবুক ও টুইটারে সংঘ প্রচারকরা ঘৃণার বিষ ছড়াতে থাকে, ৩০-৪০,০০০ মানুষের মিছিল কে আড়াই লক্ষ মানুষের মিছিল বলে মানুষ কে বিভ্রান্ত করে। এদের সাথে যোগ দেয় সংঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠ সমস্ত প্রচার মাধ্যমগুলি, যেমন জী নিউস এবং তারাও ক্রমাগত বিদ্বেষমূলক প্রচার চালাতে থাকে, কেউ কেউ আবার মালদার ঘটনার সাথে মধ্য প্রাচ্যের আইএসআইএসের তুলনা টানে, এবং বাংলার বাইরের সমস্ত সংঘ প্রচারকরা ক্রমাগত ভাবে বাংলার হিন্দুদের বাঁচানোর জন্যে কুম্ভিরাশ্রু বর্ষন করতে থাকে ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়াতে।  

বাংলার প্রধান প্রচার মাধ্যমগুলি এই বিষয়ে সংবেদনশীলতা সহ গভীর সতর্কতার সাথে সংবাদ পরিবেশন করে নিতান্ত বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে।কিন্তু সংঘ পরিবারের বেসরকারী মুখপত্র যুগশঙ্খ ক্রমাগত ভাবে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে আরএসএস ও বিজেপির রাজনৈতিক অভিসন্ধিকে চরিতার্থ করার রাস্তা করে দিয়েছে, এদের মিথ্যার বেসাতি আজ সংঘ পরিবারের ঘনিষ্ট বর্তমান পত্রিকাকেও লজ্জা দেবে।  আধুনিক ভারতে ক্ষমতার পদলেহন করে কি করে বহুজাতিক পুঁজির দৌলতে সংবাদ মাধ্যম ব্যবসা করে তার উদাহরণ হলো যুগশঙ্খ।

বাংলা বাদে সমগ্র ভারতের উগ্র দক্ষিনপন্থী সংঘ সমর্থক প্রচার মাধ্যম, সংবাদ মাধ্যম ও ইন্টারনেট এর সংঘ পরিবারের ওয়েবসাইটগুলি রীতিমত বাজার গরম করতে মিথ্যার বৈশ্যালয় চালিয়ে গেছে গত কয়েকদিন ধরে। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাংলার পূর্বতন সংঘ প্রচারক তথাগত রায়, যিনি ত্রিপুরার রাজ ভবনে রাজ্যপালের গদিতে বসে একদিকে সেই ঔপনিবেশিক পদের লাভ তুলে বিজেপির গোয়েন্দাগিরি করছেন অন্যদিকে সারাদিন টুইটারে ঘৃণার বাণী নিসৃত করে যাচ্ছেন।  তাঁর সাথে যোগ দিয়েছেন বাংলার তপন ঘোষ, যার হাব ভাব দেখলে মনে হবে তিনি যেন সানি দেওলের অনুকরণ, যিনি একা গিয়ে সমস্ত বাংলাদেশী মুসলমানদের শায়েস্তা করে আসবেন। এদের সাথে আছেন ইসরাইলের ওকালতি করা এবং ব্রজেশ মিশ্র ও মোসাদের সাথে মিলে বাজপেয়ীর আমলে ভারত ইসরাইল সমঝোতার মুখ্য হোতা ও সংঘের উগ্র সমর্থক সাংবাদিক কাঞ্চন গুপ্ত, আছেন সংঘের প্রচারক থুড়ি সাংবাদিক অভিজিত ভট্টাচার্য, আছে অসম, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক ও গুজরাটের সংঘের ইন্টারনেট প্রচারকরা।

তথাগত রায়ের আদেশে তড়িঘড়ি তৈরি হয় উইকিপেডিয়াতে ২০১৬ কালিয়াচক দাঙ্গাকালিয়াচক ইসলামিক গুন্ডামি নামক দুইটি পেজ।

             
উইকিপেডিয়ার পেজ গুলি বানায় নিজিল শাহ নামক এক গুজরাটি সংঘ প্রচারক যে সারা জীবন গুজরাট ও মোদী রাজের গুনগান করে উপার্জন করে, যার সাথে বাংলার বা বাঙালির কোনও যোগাযোগ নাই। অন্য পেজটি বানানো হয়েছে অসম বিজেপির পক্ষ থেকে যারা আবার বাংলার মানুষের চেয়ে বেশি বাংলার সমস্যা বোঝার চেষ্টা করেছে।

এই উইকিপেডিয়া পেজ দুটিতে শুধু ঘৃণা ব্যক্ত করা হয়েছে ইসলামের নামে এবং মূল ঘটনার উপর যত না শব্দ খরচা করা হয়েছে তার চেয়ে বেশি শব্দ খরচা করা হয়েছে ঘটনার ঐতিহাসিক পটভূমি ব্যাখা করতে, যার মূল জায়গা হলো মুসলমান ধর্মগুরু মুহাম্মদকে সমকামী বলে প্রতিপন্ন করা এবং সেই কথাটি বারবার উল্লেখ করা হয়েছে এই পেজ গুলিতে।

অনেকবার অনুরোধ করা সত্বেও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ বা প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি এই পেজগুলির বিরুদ্ধে, করা হয়নি কোনও আইনি তদন্ত । যদিও এইরকম তথ্য ভারতীয় দন্ডবিধি অনুসারে ঘৃণা ছড়ানোর কাজ করে, তবুও তথাকথিত মুসলমান দরদী মমতাময়ী মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করে না কোনও অজ্ঞাত রাজনৈতিক অভিসন্ধির কারণে।  

উইকিপেডিয়া পেজগুলির সাথে সাথে অনেক সংঘ ঘনিষ্ট ওয়েবসাইট ও পোর্টালে বিকৃত খবর প্রকাশ করা হয়, পুরানো ছবি সুপার কম্পস করে প্রকাশ করা হয় মালদার ছবি বলে এবং সর্বোপরি এই সমস্ত কিছুর সাথে চালানো হয় একটি সর্ব ভারতীয় প্রচার যে পশ্চিমবাংলার হিন্দুরা নাকি আক্রান্ত, তাঁরা নাকি তীব্র আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এবং এই সব বলা হয় আরএসএস ও বিজেপির পক্ষ থেকে।

এই সময়ে পশ্চিমবাংলায় বিজেপির একমাত্র বিধায়ক শমিক ভট্টাচার্য মালদার কালিয়াচকে গিয়ে গ্রেফতার হন এবং পরে ইংলিশবাজার থানা থেকে রেহাই পান।  মালদার একমাত্র পথ সভায় শমিক ভট্টাচার্য দাবি করেন যে কালিয়াচকের ঘটনার পিছনে বিদেশী শক্তির হাত আছে এবং জাতীয় তদন্ত সংস্থার দ্বারা ঘটনার তদন্তের দাবি করেন। কিন্তু এর সাথেই বোমা ফাটালেন শমিক ভট্টাচার্য, বললেন যে কালিয়াচকে কোনও প্রকারের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়নি এবং সাম্প্রদায়িক কারণ খোঁজা ভুল হবে। শমিক ভট্টাচার্যের এই বিবৃতির কথা কিন্তু রাজ্য বিজেপি তাদের টুইটার এর পাতায় জেনে শুনে চেপে গেছে কারণ পশ্চিমবঙ্গে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মোদী হাওয়ায় একটু গ্যাস খেয়ে বিজেপি এখন কলকাতার মসনদ দখল করার স্বপ্নে বিভোর।  এর ফলে যেনতেন প্রকারে বিজেপিকে পশ্চিমবঙ্গ বিধান সভা নির্বাচনে বেশি নাম্বার তোলার তাগিদে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ চালিয়ে যেতে হচ্ছে।

বিজেপি ও আরএসএস যে ভাবে মালদার কালিয়াচকের ঘটনা কে কেন্দ্র করে দেশ জোড়া এক ঘৃণ্য মেরুকরণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তা দেখে আমাদের কি হিটলারের আমলের রাইখস্ট্যাগ বিল্ডিং এর অগ্নি সংযোগের ঘটনা মনে পড়ে না? শতাব্দীর বদল হলেও ফ্যাসিবাদীদের চক্রান্তের ধরন ও কার্য প্রণালীতে বিশেষ কোনও পরিবর্তন দেখা যায় না সে কথা বেশ উপলব্ধ হলো।

পশ্চিমবাংলার বিধানসভা নির্বাচনে এবার প্রদেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের উপর এক বিরাট গুরু দ্বায়িত্ব এসে পড়বে, তা হলো যেনতেন প্রকারে পশ্চিম বাংলার মাটি থেকে বিজেপি ও সংঘ পরিবারের অবশিষ্ট কে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দেওয়া। বহুজাতিক সংস্থাগুলির চাঁদা নিয়ে যে সমস্ত আরএসএস প্রচারকরা গ্রামে গ্রামে সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়াচ্ছে  তাদের বাংলা থেকে চিরকালের জন্যে বহিস্কার করে দেওয়ার।  বাংলার মাটিকে, বাংলার ঐতিহ্য কে, বাংলার হিন্দু মুসলমানের ঐক্য কে, বাংলার খেটে খাওয়া মানুষের ঐক্য কে রক্ষা করে বাংলা বিরোধী হিন্দু ফ্যাসিবাদী বিজেপি - আরএসএস ও মুসলিম মৌলবাদীদের জন্যে বাংলার মাটিকে চিরকালের জন্যে দুর্জয় ঘাঁটিতে পরিণত করার কর্তব্য আজ এক পবিত্র দ্বায়িত্ব হিসাবে বাংলার শ্রমিক - কৃষক ও মেহনতি জনতার কাছে এসেছে, তাঁদের এই সকলকে সাফল্যের সাথে এই মহান দ্বায়িত্ব পূর্ণ করতে হবেই।           
  

এই ব্লগের সত্বাধিকার সম্বন্ধে